১Lik
বলিউডের চাকচিক্যে এসে অনেকেই মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলেন। কেউ জড়িয়ে যান নেশার জালে, কেউবা পড়ে যান সম্পর্কের গ্যাঁড়াকলে, কেউ আবার হতাশার কৃষ্ণগহ্বরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। এ যুদ্ধে তাঁরাই জয়ী হতে পারেন, যাঁদের ভেতর থাকে অসম্ভব সহনশীলতা আর অনবরত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার শক্তি। এই যেমন নিমরাত কৌর। শুধু বলিউডে এসেই নয়, ছেলেবেলা থেকে এ মেয়ে যুদ্ধ করেই নিজেকে নিয়ে গেছেন এমন এক উচ্চতায়, যেখানে হতাশা, পরাজয় কিংবা বলিউডের নোংরা প্রতিযোগিতা তাঁর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না।
২০০৪ সাল থেকে বলিউড-যাত্রা শুরু নিমরাত কৌরের। কুমার শানু আর শ্রেয়া ঘোষালের জনপ্রিয় গান ‘ইয়ে কেয়া হুয়া’র মিউজিক ভিডিওতে প্রথম ঝলক দেখা যায় তাঁর। এরপর বলিউডে পেরিয়ে গেছে তাঁর ১১ বছর। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তাঁর ছবির সংখ্যা মাত্র ছয়টি। কারণ সাফল্যে গা ভাসিয়ে দেওয়ার মেয়ে নন নিমরাত। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে একের পর এক ছবি করে যাবেন, এমন কথা নাকি নিমরাত ভাবতেও পারেন না। ভারতীয় পত্রিকা বোম্বে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিমরাত বলেন, ‘একে টিকে থাকা বলে? এভাবে নাম রক্ষার ইচ্ছে নেই।’সত্যিই তো, যে মেয়ে তাঁর ব্যক্তিজীবনে দেখে এসেছেন অন্ধকারের চেয়েও বেশি কালো এক সময়, তাঁর কাছে বলিউডে হারিয়ে যাওয়ার ভয় তো তুচ্ছ। স্কুলপড়ুয়া নিমরাত যখন কাশ্মীরে একদল উগ্রবাদীর কাছে তাঁর বাবাকে হারান, তখন থেকেই জীবনের কঠিন রূপ দেখা শুরু হয় তাঁর।
নিমরাত বলেন, তাঁর বাবা ভুপিন্দর সিং ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে কাশ্মীরের হিজব-উল-মুজাহিদিন নামের একটি দল তাঁকে অপহরণ করে। এরপর সাত দিন নির্যাতনের পর নিমরাতের বাবাকে তারা হত্যা করে। পরে ভারতীয় সরকার ভুপিন্দর সিংকে ‘সূর্য চক্র’ উপাধি দেয়। শহীদ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি পান রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। কিন্তু এত ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে ফেলার পর জীবনের মোড় ঘুরে যায় নিমরাতের। সামরিক পরিবার থেকে হঠাৎ তাঁরা চলে আসেন আমজনতার কাতারে। ওই সময় বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যে যুদ্ধ নিমরাতের পরিবারকে করতে হয়েছে, তা ছিল তাঁদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। নিমরাতের মা, নিমরাত আর তাঁর ছোট বোন—এ নিয়েই নতুন পৃথিবী শুরু হয় তাঁদের। ওই সময়ের কথা মনে করে দ্য লাঞ্চবক্স ছবির অভিনয়শিল্পী নিমরাত বলেন, ‘একটা সময় বাইরে বেরোলেই সঙ্গে থাকতেন সেনাবাহিনীর তিন-চারজন সদস্য। পাশে থাকত সেনাবাহিনীর জিপগাড়ি। কিন্তু দিন কয়েকের ব্যবধানেই যখন নিজেকে সেই পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আবিষ্কার করেছি, তখন আশপাশকে খুব তেতো মনে হয়েছে।’
২০০৫ সালে ইয়াহা নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেন নিমরাত কৌর। তবে সফলতা পাননি। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে মডেলিং আর ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘ক্যাডবেরি সিল্ক’ চকলেটের বিজ্ঞাপন দিয়ে পরিচিতি পান দর্শকদের মাঝে। ব্যক্তি ও কর্মজীবনে হোঁচট খেয়েছেন কয়েকবার, আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। ২০১২ সালে পেডেলার্স ছবি দিয়ে পা রাখেন কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের লালগালিচায়। আর পরের বছর কান উৎসবসহ বিশ্বের বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসব আর বলিউডের বক্স অফিসেও দ্য লাঞ্চবক্স দিয়ে সাড়া ফেলেন নিমরাত। মার্কিন টিভি সিরিজ হোমল্যান্ড-এ ভারতীয় এই অভিনেত্রীকে দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। এভাবেই চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যোদ্ধা এ মেয়েটি জিতে নেন সাফল্য।
এরপরও নিমরাতের কাছে সাফল্যগুলো কেমন জানি অসম্পূর্ণ মনে হয়। বললেন, ‘স্কুলে কিংবা কলেজে কোনো নাটক শেষে যখন মঞ্চে এসে দর্শকদের সামনে দাঁড়াতাম, তখন বাবার মুখটা খুঁজতাম। এখনো যখন কান উৎসব কিংবা অন্য কোথাও যাই, সেখানেও দর্শকের সারিতে বাবাকে খুঁজি। তিনি থাকলে হয়তো প্রাপ্তিগুলোর স্বাদ অন্য রকম হতো।’
হঠাৎ কেন আজ যুদ্ধজয়ী এই মেয়ের প্রসঙ্গ সামনে উঠে এসেছে? কারণ ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি আসছে নিমরাত কৌরের ছবি এয়ারলিফট। এতে অক্ষয় কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘খিলাড়ি’ অক্ষয়ের খ্যাতির সামনে যেন যোদ্ধা নিমরাতের অর্জনগুলো ঢাকা পড়ে না যায়, তাই এই নিমরাত-স্তুতি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া, ডিএনএ ইন্ডিয়া এবং হিন্দুস্তান টাইমস অবলম্বনে
No comments:
Post a Comment