সিনেমার নাম "ইশপিড", কিয়ানু রিভস আর সান্ড্রা বুলকের স্পিড থেকে মারিং না, একেবারে খাঁটি দেশি পণ্য।
সোয়া চারটার শো দেখার জন্য আমরা পৌনে চারটায় মধ্যে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে হাজির। কিন্তু টিকিট নাই। টিকিটের জন্য ডজন ডজন মানুষ হাহাকার করছে, চারিদিকে বাতাস সেই হাহাকারে ভারী হয়ে গেছে। কাউন্টার থেকে জানালো হলিউডের যে সিনেমাগুলো বাকি পেক্ষাগৃহে চলছে সেগুলোর টিকিট আছে। মনে মনে বললাম - আরে বেটা বুরবক, জলিল এর কাছে জুলিয়া রবার্টস এর বেল আছে রে !! কোথাকার কোন "মিরর মিরর" কোথাকার কোন 'দ্যা হাঙ্গার গেম'! ইশপিড এর কাছে বেল আছে এগুলার!! জলিল ভাই জিন্দাবাদ।
সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম পরবর্তি শো টা দেখবো, যা আছে কপালে। কিন্তু পরবর্তি শো পৌনে তিন ঘন্টা পরে। তাতে কি ! জলিলের ইশপিড দেখতেই হবে।
হাউজফুল হল নিয়ে সিনেমা শুরু হলো, ঠোঁট ভরে লিপস্টিক মেখে নায়ক জলিল বুকডন দিচ্ছে-দৌড়াচ্ছে-লাফাচ্ছে। নায়ক অনন্য চৌধুরী দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান AJI গ্রুপের এমডি। জগত সংসারে তার আছে একমাত্র ভাইঝি (দীঘি), দীঘির জন্য সর্বদা মগ ভর্তি পানি নিয়ে সেমী-মিনিস্কার্ট পড়া দুই জলহস্তি দাড়িয়ে থাকে। নায়ক তার প্রতিষ্ঠানে যাবার রাস্তায় এক এমবিএ বেকারকে চাকরী দিয়ে মহত্বের পরিচয় দেয়। তার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে শটগান ওয়ালা দলবল নিয়ে পরিদর্শনের সময় এক বিকল মেশিন মুহূর্তের মধ্যে ঠিক করে ফেলে, অনন্য চৌধূরীর জ্ঞান দেখে হল ভর্তি মানুষ খুশিতে ফেটে পরে। আমার পেছন থেকে আওয়াজ আসে - নায়ক নিশ্চয়ই ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারীং পাশ।
নায়কের অফিসের এক অন্ধকার কক্ষে দেখায় ডজন খানেক কম্পিউটার নিয়ে লোকজন ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের দিকে গভীর মনযোগে খেয়াল রাখছে। কারনটা সিনেমা শেষ করেও বোঝা যায় নাই। আমাদেরই অক্ষমতা।
এদিকে নায়কের কারনে দেশের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বিরাট ফাপরে। তারা আরেক ব্যবসায়ী কিবরিয়া খান (আলমগির) এর বাসায় মিটিং বসায়, যেভাবেই হউক অনন্য চৌধূরীকে শেষ করতেই হবে।
ভাড়া করা গুন্ডারা রকেট লাঞ্চার- আরপিজি-শটগান-একে৪৭ সব নিয়া রাস্তায় আক্রমন করে। রকেট মেরে নায়কের সামনের গাড়ি পেছনের গাড়ি উড়াইয়া দেয়। কিন্তু নায়ক তার লেক্সাসের ছাদ ফুড়ে পিস্তলের গুলি ছুড়তে ছুড়তে সব গুন্ডাদের মাইরা তক্তা বানাইয়া কিবরিয়া খানের বাসায় গিয়া থ্রেট করে - মিশটার খান !! ভালো হইয়া যা, ভাল হইতে পয়সা লাগে না। সিগারেটের গন্ধ শুকলেই চেন স্মোকার হওয়া যায় না মিশটার খান !!
পাকিস্তানী বিমান নামতাছে, আমরা সব নড়ে চড়ে বসি নির্ঘাত কিবরিয়া পাকিস্তান থেকে তালেবান আমদানী করতাছে অনন্যরে খতম করার জন্য। কিন্তু একি! প্লেন থেকে নামে নাইকা সন্ধ্যা, সে নাকি ইংল্যান্ড থেকে ফ্যাশন ডিজাইন শেষ করে দশ বছর পর দেশে আসছে। সে আবার অনন্য চৌধূরীর জিএম এর ছোট বোন। ঢাকার রাস্তা দেখে নাইকা সন্ধ্যা তার বড় ভাইকে বলে ঢাকা অনেক বদলাইছে। বড় ভাই তখন বর্তমান ডিজিটাল সরকারের গুনকির্তন কইরা বিরাট বিরাট বয়ান দেয়।
নাইকা সন্ধ্যা ভাইয়ের অফিসে গিয়ে প্রথম দেখাতেই জলিলের প্রেমে পড়ে যায়, তার আইফোন দিয়ে সমানে জলিলের পোস্টারের ছবি তুলতে থাকে। এর মধ্যে ফ্যাক্টরীতে আগুন লাগে, লোকজন চিল্লাফাল্লা করে জলিল ঠোট লাল করে লিপস্টিক মেখে এক আহত শ্রমিককে কোলে তুলে তার লেক্সাসে করে হাসপাতাল নিয়ে যায়। এই সব দেখে নাইকা সন্ধ্যা পুরা কাইত !! রাতে সন্ধ্যা নিজের বেডরূমের দেয়াল জুড়ে শুধু জলিলকেই দেখে আর কল্পনায় গান গায়, সেই গানের কথা "আমি রোমিও তুমি জুলিয়েট, প্রেম করিতে আজ করবো না তো লেট"।
এদিকে কিবরিয়া খানের বিদেশি পার্টনার এন্ড্রু দেশে আসে (সেইটাও পাকিস্তানী প্লেনে চড়ে), দেশে এসেই সে জলিলের সাথে দেখা করে বলে - ল, আমরা মিল্লা মিল্লা ব্যবসা করি। এত চ্যাতস ক্যা !
জলিল জবাবে বলে - যা, ফুট !!
এন্ড্রু - ডু ইউ নো মাই ডিটেলস !
জলিল - আঈ নো! বাট ইউ ঢোন্ট নো মাঈ ডিটেলস। তুই ছিলি এনায়েত, খেলার নাম কইরা বিদেশ গিয়া ডান্কি মারছোস। স্মাগলিং কইরা অখন আন্ডু পিনছোস !
এন্ড্রু - তোরে খাইছি। দেইখা লমু। আমার ইতিহাস নিয়া মজা লস ! দেয়াল লিখোস !!!
কেমনে কেমনে নাইকার সাথে নায়কের বিয়া হয়ে যায়। বাসর রাতে নাইকার দৌড়ানি খেয়ে জলিল সারা রুমে দৌড়ায় আর দৌড়ায় শেষে বিছানায় পড়ে লজ্জায় দুই হাতে চোখ ঢাকে আর নাইকা ঝাপিয়ে পড়ে জলিলের উপর।
হানিমুন করতে কক্সবাজার যায় জলিল-সন্ধ্যা আর তাদের ভাতিজি দীঘি। এদিকে কিবরিয়ার গুন্ডারা মর্ত্য ফুড়ে একে৪৭ নিয়া 'ওওওয়াইক!!!' হুংকার দিয়ে মুহুর্মুহু গুলি বর্ষন করতে থাকে। এর মধ্যে একটা গুলি দীঘির গায়ে লাগে। কক্সবাজার সী-বিচ থেকে ক্যামেরা সোজা লালমাটিয়ার কেয়ার হসপিটালে নিয়ে আসে। অবধারিত ভাবেই ডাক্তার ঘোষনা দেয় - শী ইজ নো মোর। শুনে জলিল যেভাবে বাচ্চা মেয়েটার উপর ঝাপিয়ে পড়ে সেটা দেখে হল ভর্তি দর্শক আৎকে ওঠে, বাচ্চা মেয়েটা কি অভিনয় করতে এসে সত্যি সত্যি বিপদে পড়লো নাকি!
দীঘির মৃত্যুর শোক কাটাতে নায়ক-নাইকা মালয়শিয়াতে যায়। সেখানে গিয়ে হাত ধরাধরি করে শরীর বাঁকাত্যাড়া করে একটা পূর্নদৌর্ঘ গানও গায় এর ফাঁকে এন্ডু-কিবরিয়া গং তাদের মালয়েশিয়ান মাফিয়াদের সাহায্যে গানের মাঝখান থেকে নাইকা কে কান্ধে করে তুলে নিয়ে যায়। যাবার সময় কিবরিয়া একটা গুলি করে জলিলের হার্ট বরাবর। জলিল এর ঠিকানা হয় হাসপাতালে। এদিকে এন্ডু-কিবরিয়া গং এক চিকন ফিগারের ললনারে দিয়া জলিলের কাছে ডিভিডি ম্যাসেজ পাঠায়। জলিল ডিভিডি চালাইয়া দেখে নাইকা সন্ধ্যারে একটা কাঁচের ঘরে আটকাইয়া রাখা হইছে। সে কাটা মুরগির মত ছটফট করতাছে আর বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করছে। এন্ডু জানায় - সময় পাঁচদিন এর মধ্যে কাঁচের ঘরে অক্সিজেন কমিয়া যাইবে এবং কার্বনডাই অক্সাইড বাড়িয়া যাইবে। সময় কম, বাঁচাইতে চাইলে পাঁচজন মাফিয়ার রেটিনা স্ক্যান করাইয়া চাবি খুলিতে হইবে। লৌড়া জলিল লৌড়া..... ফুল ইশপিডে লৌড়া!!! এতক্ষনে দর্শক সিনেমার নামকরনের উদ্দেশ্য ধরতে পাইরা হাফ ছাড়লো।
ডিভিডি দেইখা নায়কের অবস্থা দিশেহারা সে দিশেহারা হইয়া একটা গান ধরলো। সেই গানে নায়ক কান্দে-আকাশ কান্দে-বাতাস কান্দে-চন্দ্রতারা কান্দে ... শুধু দর্শক দাঁত বাইর কইরা মজা লয়। অনেক্ষন কান্দাকাটির পর গান থামে... গান থামা মাত্র হল ভর্তি দর্শক তুমুল করতালি দিয়া কান্নাকাটি থামানোর জন্য নায়ক কে ধন্যবাদ জানায়।
নায়ক কান্নাকাটি করতে করতে একরাইত বাসায় ফিরতাছিলো, তখন দেখে রাস্তায় এক সুন্দরীকে তিন-চাইরটা বদমাইশ 'খামান বেঈবি' কইয়া ডাকতাছে। জলিল তর্জনি উচিয়ে হুংকার ছাড়ে - হেঈ ইউ গাইজ! ইশটপ !!!!!!!!!!!!!!!!
গুন্ডাপান্ডা - হু দ্যা হেল আর ইউ !!! গেলি !!!
জলিল - ইশটপ আঈ ছে !!!!!
ইয়াআআআআআআআ ঢিসুমাইক ঢিসুমাইক !! আরেক নাইকা উদ্ধার হয়, সেই নাইকা কে নিয়ে জলিল তার বউ সন্ধ্যাকে উদ্ধারে নামে। নতুন নাইকা কোমর দুলিয়ে গুন্ডাদের আখড়ায় গান গায় - 'এসো না এসো না এতটা কাছে, রাতেরও পেয়ালায় কি যাদু আছে'
এদিকে জলিল ছদ্মবেশী ওয়েটার হয়ে হাতে সিভার্স রিগ্যাল হুইস্কির বোতল নিয়ে এক মাফিয়ার বুকে গুল্লি মেরে আসে।
একে একে আরো তিন্টা গুন্ডা খতম করে জলিল। কিন্তু কিবরিয়া আর এন্ডুর কাছে যাবার আগেই সেকেন্ড নাইকা 'আই লাবু অনন্য' বলতে বলতে গুন্ডাপান্ডাদের হাতে মারা যায়।
জলিল কিবরিয়ার আস্তানায় হানা দেয়। এবং বিকট 'ওয়াইক!!!' 'ওয়াইক!!!' শব্দে কিবরিয়ার সাঙ্গপাঙ্গদের খতম করে দেয়।এন্ড্রুও খতম হয়। শেষে মিশটার কিবরিয়া ওরফে আলমগির জলিলকে বুড়া আঙুল দেখিয়ে নিজেই নিজের মাথায় গুলি করে। জলিল আগের সবার রেটিনা স্ক্যান নিছে নাঈকার বন্ধ কাঁচের ঘর খোলার পাসওয়ার্ড হিসেবে। শুধু মাত্র মিশটার কিবরিয়ারটা নিতে পারে না। মরা কিবরিয়ার চোখের পাতা দশাসই জলিল টেনে হিচড়েও খুলতে পারে না। সে ছুটে যায় নাইকার কাঁচের ঘরে গুলি মেরেও কিছু করতে পারে না। শেষে গলার তাবিজ খুলে ফতোয়া দেয়.... নিউটনের সূত্র, আইনস্টাইনের সূত্র, গ্যালিলিওর সূত্র সব কিছু আল-কোরআনে আছে। হক মাওলা... কাঁচের দরজার পাসওয়ার্ডও নিশ্চই এই তাবিজে আছে। হক মাওলা!!
সে তাবিজ খুলে ছুড়ে মারে আর কাঁচের ঘর "উহ বড্ড লেগেছে" বলে খুলে যায়। শেষ পর্যন্ত নাইকা উদ্ধার হয়। তামাম জাহান হাফ ছেড়ে বাঁচে। Steve
জলিলের নামকরন এর সার্থকতার পোস্টমার্টেম নিচে দেয়া হলো -
খোঁজ = দ্যা সার্চ
হৃদয় ভাঙা ঢেউ = দ্যা হার্ট ব্রেকিং ব্লো
দ্যা ইশপিড = গতি
অনন্ত জলিল = অনন্ত জল+ঈল = দ্যা ইনফিনিট ওয়াটার ঈল
No comments:
Post a Comment